প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যেকার প্রীতির সম্পর্ককে সুসংহত করে আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই। এবারের সফরে বাংলাদেশের উল্লেখ্যযোগ্য প্রাপ্তি হলো কুশিয়ার পানি বণ্টনে সমঝোতা।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গণভবনে সদ্য সমাপ্ত ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সাম্প্রতিক সফরে দুই দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি কোভিড মহামারির প্রেক্ষিতে দীর্ঘ তিন বছর বিরতির পর আমার এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, সফরের পুরো সময় জুড়ে আমরা ভারতের আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ ও সৎ প্রতিবেশী হিসেবে সমতা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে দু’দেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার লক্ষ্য করেছি। ভারতীয় নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে, সংবাদ মাধ্যমে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আমি বাংলাদেশের জন্য যে প্রীতি ও সৌহার্দ্য লক্ষ্য করেছি তা সত্যিই অসাধারণ। এই প্রীতির সম্পর্ককে সুসংহত করে আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই।
সফরের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে দুই দেশের মানুষ উপকৃত হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, এই সফরে সহযোগিতার যে সব ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করলে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, সব মিলিয়ে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের একসঙ্গে নতুনভাবে এগিয়ে চলার গতি সঞ্চার হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে এই সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া অচিরেই একটি সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে পরিণত হবে।
ঐতিহাসিক ভাবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত আমাদের কাছের প্রতিবেশি এবং বন্ধুরাষ্ট্র। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ভাষা ও সংস্কৃতির সাযুজ্যের কারণে আমাদের সম্পর্ক প্রগাঢ় হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালে সহায়তা ও স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সহযোগিতা এ বন্ধুত্বকে বিশেষত্ব দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারত অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই প্রভূত সাফল্য অর্জন করেছে।
ভারত সফরে অর্জন
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সদ্য ভারত সফরের বেশ কিছু অর্জনের কথা তুলে ধরেন। অর্জনগুলো হলো:
১. কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, যার মাধ্যমে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত।
২. সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা শূণ্যে নামিয়ে আনতে কাজ করতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে ।
৩. ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হবে।
৪. চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য রফতানি বন্ধের আগে বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দিতে ভারত সরকার পদক্ষেপ নেবে।
৫. বাংলাদেশের মুজিবনগর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ঐতিহাসিক ‘স্বাধীনতা সড়ক’ চালু করা হবে।
৬. নদী দূষণ এবং অভিন্ন নদ-নদীর ক্ষেত্রে নদীর পরিবেশ এবং নদীর নাব্যতা উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
৭. রেলওয়ে সেবার মান বাড়াতে আইটি সল্যুশন বিনিময় করা হবে।
৮. ২০২২ সালের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি নিয়ে দু’দেশের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।